বিজ্ঞাপন দিন

প্রকাশিত হয়েছেঃ আগস্ট ২৬, ২০২১ সময়ঃ ৮:৪৬ অপরাহ্ণ

গাজীপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই, গাজীপুর ইউনিট পৃথক দু’টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে। গত দুই বছর আগে একটি পুকুর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর (২০) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে জেলার শ্রীপুর থানা পুলিশ। এতো দিন অন্ধকারে ছিল এই হত্যা রহস্য। গত ২০ ফেব্রুয়ারি শ্রীপুর থানার এই হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় গাজীপুর পিবিআই। পিবিআই কর্মকর্তারা টানা প্রায় ছয় মাস তদন্তে এ হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক সব তথ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন। গ্রেফতার করা হয় ওই অজ্ঞাত নারীর ধর্ষক ও ঘাতক সুমন মিয়াকে (৩৬)। অপরদিকে গত বছর ২৫ আগস্ট জেলার কাপাসিয়া থানার সালুয়াটেকি গ্রামের একটি পুকুর থেকে ইদ্রিস আলীর লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। এ হত্যাকান্ডের এক বছর পর পিবিআই তদন্তে জানা গেল, ওয়ারিশি সম্পত্তি নিয়ে মামা-ভাগিনার বিরোধে খুন হন ইদ্রিস আলী।
বৃহস্পতিবার এক প্রেসব্রিফিংয়ে পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত সুমন পেশায় অটোরিকশা চালক, তার স্ত্রী জর্ডানে থাকে। স্ত্রী বিদেশ থাকায় সে প্রায়ই এলাকায় পেশাদার ভাসমান পতিতা এনে ব্যভিচারে লিপ্ত হতো। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অজ্ঞাত পরিচয় ওই নারীর হত্যারহস্য উদঘাটনের জন্য সুমনকে টার্গেট করে পিবিআই। পারিপার্শ্বিক সব তদন্ত শেষে গত বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেই হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ঘটনার লোকহর্ষক বর্ণনা দেয়। এব্যাপারে বৃহস্পতিবার সে স্বেচ্ছায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
আসামী সুমনের স্বীকারোক্তির বরাদ দিয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার আরো জানান, বিদেশ থেকে স্ত্রীর পাঠানো টাকায় সুমন একটি ভিভো মোবাইল সেট কিনে। তার প্রতিবেশী হৃদয় সেই মোবাইল চেয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে। এর প্রতিশোধ হিসেবে হৃদয়কে ফঁাসাতে গত ২০১৯ সালের ২১ জুন রাতে শ্রীপুর থানার নয়নপুর বাজারে গিয়ে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে এক ভাসমান পতিতাকে এলাকায় নিয়ে আসে। সুমন ওই পতিতাকে স্থানীয় কপাটিয়া পাড়ায় হৃদয়দের বাড়ির পাশে বঁাশঝাড়ে নিয়ে দুই দফায় শারীরিক সম্পর্ক করে। শেষে ওই পতিতা টাকা চাইলে সুমন বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে একটি বটি দা নিয়ে আসে এবং পতিতাকে মাটিতে শুইয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে বটি দিয়ে জবাই করে। পরে হৃদয়কে ফঁাসানোর জন্য লাশ টেনে হৃদয়দের পুকরে ফেলে দেয়। পরের দিন সেই বটি ভেঙ্গে ফেলে এবং ফেরিওয়ালার কাছে বাইশ টাকা কেজি ধরে সেটি বিক্রি করে দেয়। সুমন মিয়া (৩৬) শ্রীপুর থানার কপাটিয়াপাড়ার বাদশা মিয়ার ছেলে। গত বুধবার রাত পৌনে ৪টায় তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
ওয়ারিশি সম্পত্তির বিরোধে খুন হন কাপাসিয়ার ইদ্রিস আলী
জেলার কাপাসিয়া থানার সালয়াটেকি গ্রামের ইদ্রিস হত্যাকান্ডের এক বছর পর হত্যারহস্য উদঘাটনসহ এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পিবিআই। গত বছর ২৫ আগস্ট সালুয়াটেকি গ্রামের একটি পুকুর থেকে গলায় গুরুতর জখমের চিহ্নসমেত ইদ্রিসের লাশ উদ্ধার করে কাপাসিয়া থানা পুলিশ। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই হত্যারহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেফতারে তৎপর হয়ে উঠে পিবিআই পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পর গত বুধবার রাতে কাপাসিয়া থানার শহরটোক গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে দুখু মিয়া ওরফে সুমনকে (২২) স্থানীয় টোক বাইপাস এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পিবিআই পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত আসামী দুখু মিয়ার স্বীকারোক্তির সূত্রে জেলা পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, সৈয়দ জহির আহসান জাহিদের মামা রবিন ভূইয়ার সাথে নানার বাড়ির ওয়ারিশ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ ছিল। ভিকটিম ইদ্রিস মৌখিক চুক্তিতে জাহিদের পক্ষ নিয়ে তাকে নানার বাড়ির ওয়ারিশি জমি দখলে সহযোগিতা করে। পরবর্তীতে পরস্পরের মধ্যে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ হলে ইদ্রিস আলী জাহিদের মামা রবিন ভঁূইয়ার সাথে যোগ দেয়। এর জের হিসেবে ঘটনার ৩ দিন আগে ঘটনাস্থলের পাশে জাহিদ নিজের লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে টোক বাইপাসে ভিকটিম ইদ্রিসকে গুলি করে হত্যার ভয় দেখায়। তাদের দুই জনের প্রকাশ্য এই বিরোধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ‘এক ডিলে দুই শত্রু মারার’ পরিকল্পনা নেয় জাহিদের মামা রবিন ভূইয়া। রবিন ভাগিনা জাহিদকে ফঁাসাতে ইদ্রিসকে হত্যার জন্য গ্রেফতারকৃত আসামী দুখু মিয়া ও তার সহযোগীদের সাথে পরিকল্পনা করে এবং ১২ লাখ টাকার বিনিময়ে ইদ্রিসকে হত্যার জন্য তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন গত বছর ২৪ আগস্ট রাত ২টায় আসামীরা ইদ্রিসকে ইয়াবা ট্যাবলেট আনার জন্য মোবাইল ফোনে ঘটনাস্থলে ডেকে নেয়। ইদ্রিস সেখানে যাওয়া মাত্রই আসামীরা তাকে গলা চেপে ধরে ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে এবং এলোপাথারী মারপিট করে হত্যা করে। এর পর রবিনের ভাগিনা ওয়ারিশি সম্পত্তির দাবীদার জাহিদকে ফঁাসানোর জন্য সে (জাহিদ) নানা বাড়ির যে ঘরে মাঝে মধ্যে ঘুমাতো ঐ ঘরের পেছনে পুকুরপাড়ে ইদ্রিসের মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামী দুখু মিয়া এ হত্যাকান্ডে জড়িত তার অন্য সহযোগীদের নামও প্রকাশ করেছে। বাকি আসামীদের গ্রেফতার ও তদন্তের স্বার্থে সেসব নাম প্রকাশ করেনি পিবিআই। মামলাটি তদন্ত করেন গাজীপুর জেলা পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান পিপিএম। তদন্ত তদারকি করেন পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান। তদন্ত তত্ত্বাবধন ও দিক নির্দেশনায় ছিলেন পিবিআই ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম।
#

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com