প্রকাশিত হয়েছেঃ জুলাই ১৪, ২০২১ সময়ঃ ১০:১৩ অপরাহ্ণ
গাজীপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক:-
সুমাইয়া খাতুন (১২) ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে নাই, বরং তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। আদালতে এমনই স্বীকারোক্তি দিয়েছে গ্রেফতারকৃত দুই আসামী। ঘটনার সাড়ে ১৩ মাস পর পুরো রহস্য উদঘাটনসহ ২ ধর্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই, গাজীপুর। মামলাটির তদন্তভার গ্রহণের দুই দিনের মধ্যেই গাইবান্ধা ও টঙ্গীতে অভিযান চালিয়ে দুই ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলো, নিলফামারী জেলার ডোমার থানার চিলাহাটি মাস্টার পাড়ার রেজাউল ইসলামের ছেলে সাঈদ ইসলাম (১৯) ও লালমনিরহাট জেলা সদরের তিস্তা চৌরাটারী গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে রনি মিয়া (২১)। তারা গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর বারেন্ডা পশ্চিমপাড়ায় ভিকটিম সুমাইয়াদের বাসার পাশে ভাড়া থাকতো। ঘটনার পর তারা ওই এলাকা ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। পুলিশ আসামী রনিকে গত সোমবার গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী পশ্চিম থানার গাজীপুরা সাতাইশ নয়াবাড়ীর কবিরের বাড়ী থেকে এবং সাঈদকে গত মঙ্গলবার রাত দেড়টায় গাইবান্ধা জেলা সদরের রেলস্টেশনের পাশে মোহরীপাড়ায় মামার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। তারা এ ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বুধবার এক প্রেসব্রিফিংয়ে জানান, কাশিমপুরের বারেন্ডা পশ্চিম পাড়ার নুরুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থাকতো শিশু সুমাইয়াদের পরিবার। একই বাড়িতে পাশের রুমে ভাড়া থাকতো আসামী রনিদের পরিবার। আসামী রনির বন্ধু পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়া মিলন, হাসান ও সাঈদ টাকার বিনিময়ে তিন বেলা রনিদের বাসায় খেত। সেসুবাধে রনি ও তার বন্ধুরা ভিকটিম সুমাইয়াকে প্রায়ই উত্যাক্ত করতো। ফলে ভিকটিম সুমাইয়াদের পরিবার অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য গত বছর নভেম্বর মাসে বাসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অপরদিকে আগে থেকেই আসামী রনি ও সাঈদ ভিকটিম সুমাইয়াকে ধর্ষণের জন্য সুযোগের সন্ধানে ছিল। ইতিমধ্যে ভিকটিমের পরিবার বাসা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রনি ও সাঈদ ভিকটিমকে ধর্ষণের জন্য অনবরত সুযোগ খুঁজতে থাকে। গত বছর ৩১ অক্টোবর/২০ সকাল ৯টায় সকলে কর্মস্থলে চলে যাওয়ার পর ভিকটিম সুমাইয়াদের রুমে যায় রনি ও সাঈদ। এসময় রনি খেলাচ্ছলে ভিকটিমকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে বিবস্র করার চেষ্টা করলে ভিকিটিম বাধা দেয়। এসময় আসামী সাঈদ ভিকটিমের পা ধরে রাখে ও আসামী রনি ভিকটিমের দুই হাত বেঁধে ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। একইসাথে আসামী সাঈদ তার মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। আসামী রনির পর আসামী সাঈদও ভিকটিমকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার ভয়ে আসামীদ্বয় ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এর পর ফঁাসিতে ঝুলে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে ভিমটিমের গলায় ওড়না দিয়ে ফঁাস দিয়ে লাশ ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
প্রাথমিকভাবে এটিকে ফঁাসিতে ঝুলে আত্মহত্যা ধারণা করে গত বছর ৩১ অক্টোবর/২০ কাশিমপুর থানায় অপমৃত্যু মামলা (নং-৩৯/২০) রুজু হয়। পরবর্তীতে ময়না তদন্ত রিপোর্টে ভিকটিম সুমাইয়া খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন পাওয়ার পর অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কাশিমপুর থানায় গত ৩ জুলাই/২১ কাশিমপুর থানায় একটি হত্যা মামলা (নং ০৪) রুজু হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য পিবিআই, গাজীপুর স্ব-উদ্যোগে গত ১১ জুলাই মামলার তদন্তভার গ্রহন করে। ডিআইজি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটি তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মোঃ কাওছার উদ্দিন।