প্রকাশিত হয়েছেঃ জুলাই ১০, ২০২১ সময়ঃ ৮:৩০ অপরাহ্ণ
গাজীপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক, ১০ জুলাই:-
গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী শিল্প জোনে কুরবানির পশুরহাট বসানোর উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তারা। শিল্প জোনের সড়কগুলোর ওপর পশুরহাটের কারণে ঈদের আগে বেশ কয়েক দিনের জন্য শতাধিক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হওয়া ছাড়াও হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর মধ্যে করোনা সংক্রম ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। এব্যাপারে স্থানীয় শিল্প মালিকরা গাজীপুর সিটি মেয়র ও জিএমপি পুলিশ কমিশারের কাছে লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন। যার অনুলিপি বিভিন্ন দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শিল্প মালিকদের বাধা উপক্ষো করেই সরকারি দলের স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী নেতা সিটি করপোরেশনের ইজারা বা পূর্বানুমতি ছাড়াই পশুরহাটের প্রস্তুতি শুরু করায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল শনিবার পশুরহাটের টোল আদায়ের চৌকি স্থাপনকালে স্থানীয় শিল্প কারখানার মালিকরা বাধা দেন। তাদের বাধা উপেক্ষা করেই স্থানীয় মেঘনা ও ন্যাশনাল টিউব মোড়ে দুটি চৌকি বসানো সম্পন্ন করা হয়।
শিল্প মালিকরা জানান, রাজউকের নির্ধারিত ওই শিল্প জোনে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে পরিচালিত তৈরি পোশাক কারখানা, জীবন রক্ষাকারী ওষধ কারখানা, খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ইস্পাত শিল্প, সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের কেন্দ্রীয় ভান্ডার, বৈদুতিক সরঞ্জাম মেরামত কারখানা, তৈল শোধনকারী প্লান্ট, ভ্যাবারেজ ও রং তৈরির কারখানাসহ ছোট-বড়-মাঝারি শতাধিক সচল কারখানা রয়েছে। এমনকি সরকারের প্রস্তাবিত কভিড-১৯ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর একমাত্র প্রধান সড়কটিকেও পশুরহাটের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে শিল্প জোনের এ রাস্তাগুলোতে কুরবানির পশুরহাট বসানোর কারণে কারখানাগুলোতে পণ্য পরিবহণ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বাভাবিক চলাচল কয়েক দিনের জন্য প্রায় বন্ধ হয়ে যেত। প্রায় এক বছর যাবত শিল্প জোনের ওই রাস্তা ও ড্রেনগুলোর সংস্কার কাজ চলমান থাকায় এমনিতেই জলাবদ্ধতাসহ নানা বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। এবার করোনা সংক্রমের ঝঁুকির মধ্যেই অত্র অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুরহাট বসানোর উদ্যোগে তাদের মধ্যে রীতিমত আতঙ্ক বিরাজ করছে। শিল্প জোনের ভেতর পশুরহাট না বসানোর জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রীণ সোসাইটির পক্ষে কোষাধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ-জিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত আপত্তি জানিয়েছেন। মিজানুর রহমান জানান, পশুরহাটের কারণে স্বাস্থ্যঝঁুকি বিবেচনায় বিদেশী ক্রেতারা কারখানায় আসতে চাইবেন না। এমনকি কয়েকটি কারখানার ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিল্প জোনের প্রতিটি কারখানার প্রাচীর ঘেঁষে পশুরহাটের ভীড় এড়িয়ে পণ্য পরিবহন ও শ্রমিক-কর্মচারীদের চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার কারণে অন্যান্য বারের ন্যায় এবারও কয়েকটি কারখানা কয়েক দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনিতেই চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে শিল্প-কারখানাগুলো বহু কষ্টে সচল রাখা হচ্ছে। তার ওপর কারখানাগুলোর সামনে পশুরহাটের ভীড় ও সংক্রমনের ঝঁুকি চাপিয়ে দেওয়া হলে এতে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে এব্যাপারে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে সিটি করপোরেশন এবার আলোচিত স্থানে পশুরহাটের ইজারা বা অনুমতি দেয়নি। কারা এখানে পশুরহাট চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে এব্যাপারেও তিনি অবগত নন বলে জানান।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা নমিতা দে জানান, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে টঙ্গী শিল্প জোনে কুরবানির পশুরহাট বসানোর কোনো অনুমোদন দেয়া হয়নি।