প্রকাশিত হয়েছেঃ জুলাই ১০, ২০২১ সময়ঃ ১:৫৭ অপরাহ্ণ
মোঃ সিরাজুল মনির, চীফ রিপোর্টার।।
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সরকার। ২০২২-২৩ সালে দেশে অন্তত ৪টি এলএনজি চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা রয়েছে। ২ হাজার ৭০২ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতার এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে প্রয়োজন হবে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি ঘনফুট গ্যাস। যার সংস্থান কীভাবে হবে তা এখনও নির্ধারণ করতে পারেনি পেট্রোবাংলা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- রিল্যায়েন্স বাংলাদেশ এলএনজি এন্ড পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পিডিবির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট থেকে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা। করোনার কারণে কেন্দ্রের নির্মাণ অগ্রগতি থমকে থাকলেও রিল্যায়েন্সের পক্ষ থেকে কেন্দ্রটির অর্থায়ন নিশ্চিতের কথা জানানো হয়েছে। মেঘনাঘাটে নির্মিত ৭১৮ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য দিনে ১০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে ২ কোটি ঘনফুট হারে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হবে। শুরুতে রিল্যায়েন্সের পক্ষ থেকে জানানো হয়- তারা এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে নিজেরাই গ্যাস আমদানি করবে। কিন্তু পরে পেট্রোবাংলাই তাদের গ্যাসের নিশ্চয়তা দেয়।
সামিট মেঘনাঘাট-২ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সামিট গ্রুপের মালিকানাধীন ৬০০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা ২০২২ সালের মার্চে। কেন্দ্রটি চালু করতে গ্যাসের প্রয়োজন পড়বে দৈনিক ৩ কোটি ঘনফুট।
ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ৫৮৪ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণের জন্য চুক্তি হয় ২০১৯ সালের ৭ জুলাই। আগামী ২০২২ সালের ২৩ জুলাই কেন্দ্রটির উৎপাদনে আসার কথা। এখানেও দিনে গ্যাসের প্রয়োজন হবে অন্তত ২ কোটি ৯২ লাখ ঘনফুট।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারি কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনায় কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রটিও আমদানি করা গ্যাসে চালানোর কথা। হিসাব অনুযায়ী এখানে দিনে ৪ কোটি ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন।
কিন্তু এত গ্যাস কোথা থেকে আসবে তা জানা নেই। এখন দেশে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার দিয়ে দিনে ৯০ কোটি ঘনফুট এলএনজি গ্যাস গ্রিডে দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশে যে এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে তা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ সম্ভব।
কিন্তু বিশ্বের কোথাও এলএনজি টার্মিনাল সক্ষমতার ৭০ ভাগের বেশি এলএনজি সরবরাহ করে না। এ কারণেই আগামী ২ বছরে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি ঘনফুট বাড়তি গ্যাসের চাহিদা পূরণ নিয়ে শঙ্কিত সরকার। জ্বালানি বিভাগে সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ২০২২ এবং ২০২৩ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে এই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ দুরূহ বলে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে হত ২৭ জুন চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের ৩টি সহ দেশের ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ওই দিন সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নসরুল হামিদ বলেন, সরকারের বিদ্যুৎ খাতের মহা পরিকল্পনায় ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস বা এলএনজি থেকে ৩৫ শতাংশ, কয়লা থেকে ৩৫ শতাংশ, আমদানি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১৫ শতাংশ, পারমাণবিক শক্তি থেকে ১০ শতাংশ এবং তেল থেকে ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
তিনি বলেন, তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে দেড় বছর যাবত সারা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসছে। নতুন টেকনোলজি, নতুন সম্ভাবনা এবং জ্বালানি ক্ষেত্রের দামের ওঠা-নামার কারণে নতুনভাবে চিন্তা করতে হচ্ছে।