বিজ্ঞাপন দিন

প্রকাশিত হয়েছেঃ জুন ১৮, ২০২১ সময়ঃ ৪:০৪ অপরাহ্ণ

আসাদুজ্জামান ফজলু, দিগন্তবার্তা ডেক্স, ১৮ জুন:-ময়মনসিংহের ভালুকায় নিউ হোপ পোল্ট্রি হ্যাচারীর বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে এক খামারীর প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া দূর্গন্ধে প্রায় শতাধিক পরিবার চরম দূভোর্গের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি উম্মুক্ত স্থানে বজর্য ফেলার কারণে আশপাশের ফসলী জমি ও গাছপালার ক্ষতিসহ প্রকৃতিক পরিবেশ হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি না থাকায় এমনকি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধূ ব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশ থাকায় এ ব্যাপারে বার বার অভিযোগ দেয়ার পরও হ্যাচারী কতর্ৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
সরেজমিন এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মামারিশপুর গ্রামে প্রায় ৮/৯ বছর আগে চায়না কোম্পানী নিউ হোপ পোল্ট্রি হ্যাচারী নামে একটি মুরগীর বাচ্চা উৎপাদনকারী শিল্প গড়ে তুলেন। পরে ২০১৩ সাল থেকে ডিম হতে মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমাণে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার বাচ্চা উৎপাদন হলেও এর আগে প্রায় দেড় লাখ বাচ্চা উৎপাদন করা হতো। কিন্তু হ্যাচারীর বিষাক্ত বজর্য ও মুরগীর মৃত বাচ্চা সংরক্ষণ বা নিজস্ব কোন স্থান না থাকায় তা ড্রেনের মাধ্যমে হ্যাচারীর সিমাণা প্রাচীরের বাহিরে উম্মক্ত এলাকায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এতে ওই এলাকার আবাদি ফসল ও গাছপালাসহ প্রায় শতাধিক পরিবার বেশ কয়েক বছর ধরে হ্যাচারীর বিষাক্ত বজের্যর দূর্গন্ধে চরম দূভোর্গ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় মৎস্য চাষী আতিকুল ইসলাম জানান, দেড় একর জমি ভাড়া নিয়ে কয়েক বছর ধরে তিনি দেশীয় প্রজাতীর মাছের চাষ করে আসছেন। কিন্তু খামারের পাশে ফ্যাক্টরী কতর্ৃপক্ষ শহিদ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে জমি ভাড়া নিয়ে বিশাল আকারের গর্ত তৈরী করে ট্রাকে এনে মরা মুরগীর বাচ্ছা ও পঁচা ডিম ফেলঅর কারণে আধা কিলেঅমিটার জুড়ে পরিবেশের মারাত্মক অবস্থা বিরাজ করছে। সার্বক্ষনিক কুকুর, শেয়াল ও কাক চিলের বিচরন ও চেচামেচিতে এলাকা অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। তাছাড়া ওই বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে তার খামারের প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার মাছ মরে ভেসে উঠেছে। অপর মৎস্য চাষী ইব্রাহিম মিয়া জানান, তার নিজের ও লিজকৃত ৪০ কাঠা জমিতে কার্প ও সিলভারসহ বিভিন্ন প্রজাতীয় মাছের রেনো পোনার উৎপাদন করে আসছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু নিউ হোপ হ্যাচারীর বিষাক্ত বজের্য প্রায়ই তার পোনার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সম্প্রতি ফ্যাক্টরীর বজের্যর কারণে পোনা মরে গিয়ে তার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তাছাড়া ফ্যাক্টরীর পূর্বপাশে ঢাকার জনৈক খন্দকার ইকবালের প্রজেক্টের ভেতর প্রায় এক একর বোরো ধান ক্ষেত ও গাছপালার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্রজেক্টের কেয়ারটেকার শহিদ মিয়া জানান, তাদের রোপনকৃত ধানের গোছা বজের্যর কারণে পঁেচ যাচ্ছে। তাছাড়া চরম দূর্গন্ধের কারণে পরিবার নিয়ে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মহেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ, খোকা চন্দ্র বর্মণ ও হরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণসহ বহু পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন, পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে আর বসবাস করা যাচ্ছেনা। নিউ হোপ হ্যাচারীর বিষাক্ত বজের্যর দূর্গন্ধে নাক বন্ধ হয়ে আসে। তারা জানান, আশপাশে বসবাসরত প্রায় শতাধিক পরিবার গত তিন চার বছর ধরে হ্যাচারির বজের্যর দূর্গন্ধের কারণে চরম দূভোর্গের মধ্যদিয়ে দিনযাপন করছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার, চেয়ারম্যান ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও তারা প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানান।
স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, মিল ফ্যাক্টরীর এসব বিষাক্ত ও দূষিত বজের্যর ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি না থাকায় এমনকি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অসাধূ ব্যক্তিদের সাথে যোগসাজশ থাকায় এ ব্যাপারে বার বার অভিযোগ দেয়ার পরও হ্যাচারী কতর্ৃপক্ষ বা আশপাশে প্রতিষ্ঠিত কারখানা কতর্ৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। এতে এলাকার বিভিন্ন প্রজাতীয় ফসল ও বনজ-ফলজ গাছপালার ব্যাপক ক্ষতিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
নিউ হোপ হ্যাচারীর ম্যানেজার সেলিম রেজা জানান, তাদের হ্যাচারীর বর্জ্য বেশ কিছুদিন স্থানীয় শহিদের জায়গায় রাখছেন। এ জন্য শহিদ মিয়াকে মাসে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে। তাদের হ্যাচারীর বজের্য আশপাশের মানুষের ক্ষতি হওয়ার তেমন কোন কারণ নেই।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আছমত আলী জানান, এ ব্যাপারে এলাকার লোকজন আমার কাছে অভিযোগ করলে, আমি বহুবার হ্যাচারী কতর্ৃপক্ষকে বিষাক্ত বজের্যর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। কিন্তু ব্যবস্থা নিবে নিবে বলে তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
ভালুকা উপজেলা নিবার্হী অফিসার সালমা খাতুন জানান, এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com