বিজ্ঞাপন দিন

প্রকাশিত হয়েছেঃ মার্চ ২১, ২০২২ সময়ঃ ১:১৩ অপরাহ্ণ

এম এস মনির চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান।।

কক্সবাজারের চকরিয়ার ছেলে মাহমুদুল হাসান পড়তেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রামের বাকলিয়ার মেয়ে ফাহমিদা কামাল পড়তেন আইইউবিতে। জেলা আর বিশ্ববিদ্যালয় ভিন্ন হলেও তাদের দু’জনের মনে লেগেছিল জোড়া। ভালোবাসার মায়াবী বন্ধনে হয়ে ওঠে দুজন দুজনার। হাতে হাত ধরে স্বপ্নে বিভোর রঙিন ভুবনে উড়তে থাকে অচেনা হাজারো পথে। বিয়ে সংসার করে হতে চেয়েছেন সুখের রাজ্যের রাজা-রাণী। তবে তাদের ভালোবাসাময় স্বপ্নের রঙ্গিন আকাশজুড়ে কালো মেঘ হয়ে আসে ফাহমিদার শরীরে বাসাবাঁধা মরণঘাতী ক্যান্সার।
ফাহমিদার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালে পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালেও নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেন— ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেন বেঁচে থাকার সম্ভাবনাই নেই! পাথরচাপা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২৭ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে এনে মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে ভর্তি করান। ঘটনা এতটুকু পর্যন্ত হলে শেষ ছিল। কিন্তু না। তার পরের ঘটনাগুলো আরও অবাক করা দুঃখ জাগানিয়া।

নিজের প্রাণপ্রিয় প্রেমিকার নিশ্চিত মৃত্যু হবে সেটা জেনেও সুস্থ ফাহমিদার হাত ধরে মাহমুদ যে স্বপ্নের ভেলায় উড়ছিলেন বছর দেড়েক আগেও সেই স্বপ্নতো আর মিথ্যে হতে দেওয়া যায় না। তাইতো গত ৯ মার্চ রাতে মাহমুদ হাসপাতালের বেডেই গায়ে লাল বেনারসি পরিয়ে ১ টাকার কাবিনে বিয়ে করে নেন প্রিয়তমাকে। তখন হয়তো হাতের ওপর হাতটি ধরে বলেছিলেন,‘প্রেম-শাশ্বত, আমাদের ভালোবাসা সত্য, চিরন্তন, যুগ যুগান্তরের, স্বর্গ থেকে আসা।

তবে বিয়ের দশ দিনের মাথায় বর মাহমুদুল হাসানের হাত ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান ফাহমিদা। সোমবার সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারের এইচডিইউতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ফাহমিদা কামাল। ফাহমিদার মৃত্যুর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো— ‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’!

মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালের ম্যানেজার ইয়াছিন সিভয়েসকে বলেন, ‘মৃত্যু শয্যায় হাসপাতালে বিয়ে করে প্রেমের অমর ইতিহাস সৃষ্টিকারী ক্যান্সার আক্রান্ত ফাহমিদা কামাল (২৭) সকাল সাতটার দিকে হাসপতালের এইচডিইউতে মৃত্যুবরণ করেন। সব প্রক্রিয়া শেষ করে সকাল দশটার দিকে তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন।

বিয়ের সময় জানা গিয়েছিল, মাহমুদুল হাসানের সংকল্প ছিল— প্রেমিকা ফাহমিদাকে যদি ক্যান্সারের কাছে হার মানতেই হয় তবুও তাদের ভালোবাসাকে হারতে দিবেন না। তার সিদ্ধান্ত, ফাহমিদাকে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। নিজের পরিবারকে প্রস্তাব দিলেন তিনি সহসা ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চান। মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে বুঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অনঢ়। অবশেষে উভয় পরিবার সম্মতিতে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে গত ৯ মার্চ হাসপাতালের এইচডিইউ বিভাগে এক টাকার কাবিনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এসময় কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গালায় সোনার হার। বর হাসান পরেন সোনালী রংয়ের পায়জামা-পাঞ্জাবি। ইসলামী রীতি মেনে আকদ-কামিন রেজিস্ট্রির পর দুজন মিলে কেক কাটেন। করেন মালা বদল। উপস্থিত সকলকে খাওয়ানো হয় খেজুর ও মিষ্টি।

ফাহমিদার মৃত্যুতে গভীর শোক নেমে আসে হাসপাতাল এলাকায়। অনেকেই একনজর দেখার জন্য ভীড় করতে থাকে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করায় প্রশংসায় ভেসে চলেছেন মাহমুদুল। তাদের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com