প্রকাশিত হয়েছেঃ মার্চ ১৮, ২০২২ সময়ঃ ১০:৪৬ অপরাহ্ণ
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ, সার্চ কমিটির বৈঠক বর্জন ও নির্বাচন কমিশন গঠনের পরও ‘প্রতিক্রিয়াহীন’ থাকার পরও নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো ‘আশা’ ছাড়েন নি । আশা না ছাড়লেও আবার এও জানিয়েছেন সংবিধান রক্ষায় যথাসময়েই নির্বাচন হবে।এমনকি এখন থেকে সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবারও নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকেল ৪টায় আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আগে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হন। এসময় সিইসি এসব কথা বলেন।
এখন বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পুরো বিষয়টা নির্ভর করছে দলটির ওপর। সিইসির কথায় বুঝা গেল নির্বাচনী বল এখন বিএনপির কোর্টে। যদিও বিএনপির দাবি জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন; যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি কোনও বিষয় না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাফ কথা, সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ছোট্ট আকারের নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।
প্রথমবারের মত চট্টগ্রামে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘আমরা সংবিধান ও আইনের আলোকে সবগুলো নির্বাচন করতে চাই। এটা স্থানীয় নির্বাচন হোক আর জাতীয় নির্বাচন। আমরা আশা করি আগামী জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে সবাই আনন্দিত হবে।
অতীতের দুই নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা সমালোচনা থাকায় নতুন নির্বাচন কমিশন কি সেই ধারা থেকে বের হতে পারবে কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে নির্বাচন আয়োজন করা। আমরা সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করব। শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, সব নির্বাচন। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব তা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী আমরা সবার সহযোগিতা নিয়ে সেই সংবিধান ও আইনের আলোকে সুন্দর নির্বাচন করার জন্য সাধ্যমত ও আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব।
বিএনপি ইসি’র ডাকে সাড়া না দেওয়া প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আওয়াল বলেন, ‘আমাদের কাজ সবাইকে আহ্বান করা। কিন্তু কেউ সাড়া না দিলে সে ব্যাপারে তো আমরা কিছু বলতে পারব না। আমরা বার বার বলছি সবাই অংশ নিক।
এসময় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন, অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম সিইসির সঙ্গে ছিলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম এসেছেন এ অঞ্চলের সন্তান সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়াল। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে আজ শুক্রবার বেলা ৪ টায় তিনি আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে আসেন। শনিবার সকালে নিজ বাড়ি সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন এবং সেখানে অবস্থান করবেন। পরের দিন রোববার সকাল ১১টায় সন্দ্বীপ উপজেলায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। সোমবার সকালে সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম ফিরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
গত মাসে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে সবার কাছে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম চাওয়া হয়। আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল নাম পাঠায়। অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও নাম পাঠান। তবে বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপের মত এ প্রক্রিয়ায়ও অংশ নেয়নি। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল— ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীরর মাধ্যমেই বিএনপি সার্চ কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেছিল।
বিএনপি অংশ না নিলেও বিএনপিপিন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী আট জনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন তার মধ্যে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নামও ছিল। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পাঁচজনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ইসি গঠেনের পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই। এটি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো কমিশন কাজ করতে পারবে না। এটা জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, সরকাররকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে আমরাসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।