প্রকাশিত হয়েছেঃ মার্চ ১৩, ২০২২ সময়ঃ ৪:২৮ অপরাহ্ণ
![](https://i0.wp.com/www.digontabarta.com/wp-content/uploads/2022/03/chattogram-metropolitan-police-logo-1551C1E843-seeklogo.com_.png?resize=300%2C217&ssl=1)
২০১২ সাল থেকে ১৬ থানায় বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ২০১৫ সালে ৪টি, ২০১৮ সালে ৮টি, ২০২১ সালে ৬টি থানা গঠনের উদ্যোগ নিলেও সীমানা জটিলতা, জেলা পুলিশের বিরোধিতা কিংবা সদর দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের নিয়মের মারপ্যাঁচে পড়ে তা কখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে এবার সবা বাধা পেরিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে নতুন আরও ৪টি থানা।
নতুন এই চার থানা যুক্ত হলে সিএমপিতে থানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২০-এ। প্রস্তাবিত নতুন থানাগুলো হলো— সিএমপির উত্তর বিভাগে ‘মোহরা থানা’, পশ্চিম বিভাগে ‘কাট্টলী থানা’, বন্দর বিভাগে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল উত্তর থানা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু টানেল দক্ষিণ থানা’। এরআগে সর্বশেষ ২০১২ সালে মহানগর এলাকায় আরও চারটি নতুন থানা স্থাপনের মাধ্যমে মোট ১৬টি থানায় বিভক্ত হয়ে সিএমপির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপির এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডিং বিভাগের উপ-কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ‘থানা সম্প্রসারণের বিষয়টি নানা সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা জটিলতায় সম্ভব হয়ে ওঠেনি। নতুন করে চারটি থানা করার প্রস্তাবনার বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এখন সেটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হবে।’
থানার সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা সীমানা নির্ধারণ করে জনবল কাঠামোর বিষয়গুলো বিচার বিশ্লেষণ করে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। তা যথাযথ হয়েছে বলে বা কোন অনাপত্তি ছিল না বলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। প্রজ্ঞাপন হলে থানার অবকাঠামো নির্মাণসহ কোন জায়গায় থানা ভবন হবে তা চূড়ান্ত হবে। এরমধ্যে আগ থেকে কিছু কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমরা সম্পন্নও করেছি।’
প্রজ্ঞাপন জারি হলে থানার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করতে বেশি সময় লাগবে না বলেও মন্তব্য করেন সিএমপির এ কর্মকর্তা।
সিএমপি সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যার বিচারে রাজধানী ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামের গুরুত্ব কোন অংশই কম নয়। তাছাড়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল, সৈকতের পাশ দিয়ে নির্মিত আউটার রিং রোড, নির্মিতব্য কালুরঘাট নতুন সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরেই। পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন করে চারটি থানা স্থাপন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বঙ্গবন্ধু টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়কে কেন্দ্র করে সিএমপির বন্দর বিভাগের পতেঙ্গা থানাকে ভাগ করে ৪১ নম্বর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পুরোটা, নেভাল একাডেমি, বিমান বন্দর, পতেঙ্গা সৈকত ও টানেলের উত্তার পাড়কে কেন্দ্র করে নতুন করে স্থাপিত হবে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল উত্তর থানা’। নদীর ওই প্রান্তে স্থাপিত হবে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল দক্ষিণ থান।’ আনোয়ারা থানার কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার (কাফকো), চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা (সিইউএফএল), আনোয়ারা পার্কি বিচ ও টানেলের টোল প্লাজা থাকবে এই থানার আওতায়।
একইভাবে সিএমপির উত্তর বিভাগের চান্দগাঁও থানার মোহরায় নির্মিতব্য জান আলী হাট রেল স্টেশন, নতুন কালুরঘাট সড়ক কাম রেল সেতু, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি শোধনাগার প্রকল্প, কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা ও বিসিক এলাকার কথা বিবেচনায় নিয়ে মোহরা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো এলাকাকে নিয়ে স্থাপিত হবে ‘মোহরা থানা’। ইতোমধ্যে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িরস্থলে ছয়তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত সেই ভবনটিই মোহরা থানা হিসেবে রূপ নিবে। পাশাপাশি সিএমপির পশ্চিম বিভাগের আকবরশাহ থানা এলাকার ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের পুরো এলাকার পাশাপাশি সীতাকুণ্ড থেকে ছলিমপুর এলাকার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হবে কাট্টলী থানা। যেখানে আউটার রিং রোড, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা রয়েছে।
যদিও এরআগে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল থানা’, ‘বড় উঠান থানা’ ও ‘বিমানবন্দর থানা’ চান্দগাঁও থানার একাংশ নিয়ে ‘মোহরা থানা’, চান্দগাঁও এবং বায়েজিদ বোস্তামী থানার একাংশ নিয়ে ‘অনন্যা থানা’ এবং আকবরশাহ ও পাহাড়তলী থানার একাংশ নিয়ে ‘কাট্টলী থানা’করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। নানা আপত্তিতে তা পুলিশ সদর থেকে ফেরত আসে। বর্তমানে সিএমপির ১৬ থানা ও রিজার্ভ ফোর্সসহ মোট পুলিশের সংখ্যা প্রায় সাত হাজারের বেশি। এই চারটি থানা বাড়লে আরও ৫শ অফিসার ও ফোর্স বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটে থাকা সিএমপির নতুন নতুন বিভাগের জন্যও ফোর্স ও অফিসার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, ৩০ হাজার ৪,৬৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনজুড়ে চট্টগ্রাম মহানগরে ১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের আওতায় ছয়টি থানা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিল সিএমপি। বর্তমানে ৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনজুড়ে সিএমপির কার্যক্রম বিস্তৃত। গত ২০০০ সালে থানার সংখ্যা আরও ছয়টি বাড়িয়ে ১২টিতে উন্নীত করা হয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে মহানগর এলাকায় আরও চারটি নতুন থানা স্থাপনের মাধ্যমে মোট ১৬টি থানায় বিভক্ত হয়ে সিএমপির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে এতোদিন। এরপর থেকে নানা সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কখনো আলোর মুখ দেখেনি। চট্টগ্রাম মহানগরে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে আনুমানিক ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস হলেও সেই সাত হাজার পুলিশ সদস্যকেই সামলাতে হচ্ছে পুরো নগরের নিরাপত্তা। এরমধ্যে নগরের বাইরে কর্ণফুলী উপজেলাকেও সামলাতে হয় সিএমপিকে।
সিএমপির চার বিভাগের অধীনে পরিচালিত থানাগুলো হচ্ছে— উত্তর বিভাগে, চান্দগাঁও, খুলশী, পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ। দক্ষিণ বিভাগে, কোতোয়ালী, বাকলিয়া, চকবাজার ও সদরঘাট। পশ্চিম বিভাগে, পাহাড়তলী, হালিশহর, আকবর শাহ ও ডবলমুরিং। বন্দর বিভাগে বন্দর, পতেঙ্গা, কর্ণফুলি ও ইপিজেড থানা। এরবাইরেও চার বিভাগে ভাগ হয়ে ডিবি, এসবি, পিএমও, ট্রাফিক, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের মত বিভাগগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।