প্রকাশিত হয়েছেঃ মার্চ ১১, ২০২২ সময়ঃ ৪:৫০ অপরাহ্ণ
এক প্রকার সমন্বয়ের অভাবেে দশ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেলের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে সাগর মোহনার ১১শ’ মিটারের বাঁধহীন উন্মুক্ত স্থান। বড় কোনো জলোচ্চাস হলে উন্মুক্ত ওই স্থান দিয়ে পানি ঢুকে টানেল প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত যেভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে ঠিক একইভাবে পতেঙ্গা থেকে নেভাল একাডেমির রেডকিন চত্বর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতে নৌবাহিনীর ওয়েস্ট পয়েন্টকে ঘিরে গড়ে তোলা বাঁধের ফলে প্রচুর ভূমিও রিক্লেইম হবে। টানেলের হুমকি দূর করতে গৃহিত উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে বিদ্যমান আউটার রিং রোড প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল আজ পুরো এলাকাটি পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কর্ণফুলীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ’ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। টানেল চালু করার পর পতেঙ্গা এলাকায় গাড়ি চলাচল বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। বিপুল সংখ্যক গাড়ির চাপ সামলানোর পাশাপাশি পতেঙ্গার পর্যটন স্পটের গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন করার বিষয়টিও জরুরি হয়ে উঠে। পতেঙ্গা এলাকার গাড়ি চলাচলের জন্য সড়কের ‘ইন্টারসেকশন’ নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করার সময়ই টানেলের জন্য নতুন হুমকির বিষয়টি উঠে আসে। এতে বলা হয়- পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড নির্মাণকালে বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়েছে। এতে সাগরের জলোচ্ছ্বাস থেকে নগরী রক্ষা পাবে। এই বাঁধ নির্মাণকালে বিগত একশ’ বছরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ মিটার উঁচু করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে চট্টগ্রামে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭ মিটার পর্যন্ত বেশি জলোচ্ছ্বাসের রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু আউটার রিং রোড সাগরের স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ মিটার বেশি জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে পারবে। কিন্তু পতেঙ্গার ‘আউটার রিং রোডের স্টাটিং পয়েন্ট’ থেকে নেভাল একাডেমির দক্ষিণ পশ্চিম কর্ণারের রেডকিন চত্বর পর্যন্ত কোনো বাঁধ নেই। ওয়েস্ট পয়েন্টসহ পুরো এলাকাটি উন্মুক্ত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা বড় কোনো জলোচ্ছ্বাস হলে মোহনার এই অংশ দিয়ে পানি ঢুকে টানেল প্লাবিত করবে। এতে যে বিপর্যয় দেখা দেবে তা সামলানো অসম্ভব। ওয়েস্ট পয়েন্টসহ উন্মুক্ত স্থানটিকে টানেলের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই অবস্থায় টানেল নিরাপদ করতে আউটার রিং রোডের সুউচ্চ বাঁধকে রেডকিন চত্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান পাড়ের মতো করে বাঁধটি না করে পতেঙ্গা থেকে কোনাকুনি রেডকিন চত্বর পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এরফলে ওয়েস্ট পয়েন্ট এলাকাটি বাঁধের ভিতরে চলে আসার পাশাপাশি সাগর থেকে বিপুল পরিমাণ ভূমিও রিক্লেইম হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ মিটার উঁচু করে বাঁধ নির্মিত হলে উন্মুক্ত স্থানটি সুরক্ষিত হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ঝড় জলোচ্ছ্বাসে টানেল প্লাবিত হওয়ার কোনো শংকা থাকবে না। টানেলের স্বার্থেই জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
পয়েন্টের উন্মুক্ত স্থানটিও বড় হুমকি বলে আমাদের মনে হচ্ছে। তাই এই স্থানটিকেও বাঁধের ভিতরে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কাজটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সেজন্য আমরা নতুন প্রকল্প গ্রহণ না করে আউটার রিং রোডের বিদ্যমান প্রকল্প সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। রিভাইজড প্ল্যান দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।