বিজ্ঞাপন দিন

প্রকাশিত হয়েছেঃ মার্চ ৪, ২০২২ সময়ঃ ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ

এম এস মনির চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো।।

ইউক্রেনে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে আটকা পড়া ২৮ নাবিকদের তিনজন চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এদের মধ্যে দুজন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা ও অপরজন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাসিন্দা।
চট্টগ্রামির তিন বাসিন্দার মধ্যে একজন বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের প্রধান প্রকৌশলী উমর ফারুক (৩৫), অপরজন জাহাজের ক্রু হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব (২১)। উমর ফারুকের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নে ও মোহাম্মদ রাকিবের বাড়ি একই উপজেলার গাছুয়া ইউনিয়নে। ওমর ফারুক ঢাকায় থাকেন। তার সিডিসি নম্বর ৪১০৪। তিনি ২০২১ সালের ১৬ মার্চ কর্মরত। আর হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব ওএস-১। সিডিসি নম্বর ৩৩৮৮৫। তিনি ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে কর্মরত। রাকিব থাকেন চট্টগ্রামের হালিশহর এ ব্লকে। তাছাড়া ওই জাহাজের চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার সালমান সরোয়ার সামি (২৬) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী ইউনিয়নের ভাটিয়ারী গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, সন্দ্বীপের বাসিন্দা রাকিবের এটাই প্রথম চাকরি। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ক্রু হিসেবে জাহাজে চাকরী জীবন শুরু করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমে শ্রীলঙ্কায় যান রাকিব। পরে সেখান থেকে সিঙ্গাপুর বন্দর থেকে ‘বাংলার সম্বৃদ্ধি’ নামক বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটিতে ওঠেন।

তাছাড়া গত ২০ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বাংলার সমৃদ্ধিতে যোগ দেন সীতাকুণ্ডের সন্তান সালমান সরোয়ার সামি। সিডিসি ৯৪২১। তিনি ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মরত। ছেলের বিপদের কথা শুনে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন তার মা-বাবা।

এদিকে ইউক্রেনে আটক বাংলাদেশি জাহাজে হামলার পর বুহস্পতিবার (৩ মার্চ) বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) কার্যালয়ে ভীড় করছেন নাবিকদের স্বজনরা।

অন্যদিকে চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুকের বাবা আবুল কাশেম বলেন, ‘শুনেছি তাদেরকে ওই জাহাজ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবুও আমরা খুব চিন্তায় আছি। চোখে তো কিছু দেখতে পাচ্ছি না, যে যা বলছে, টিভিতে যা আসছে তাই দেখছি। খুব চিন্তায় সময় পার করছি আমরা। তারা যেন নিরাপদে ফিরে আসতে পারে সে অপেক্ষায় আছি।

জাহাজের ক্রু রাকিবের পিতা মো. আলী খোকন বলেন, ‘জাহাজে হামলার পর থেকেই হতাশায় সময় পার করছি। আমার ছেলে রাকিবসহ বাকিরা কেমন আছে তা বুঝতে পারছি না। আল্লাহ যেন আমার ছেলেসহ সবাইকে হেফাজতে ও নিরাপদে রাখেন।

সালমান সরোয়ারের মা ভাটিয়ারী টিএসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা চেমন আরা বেগম বলেন, ‘গত ২০ ফেব্রুয়ারি তারিখে সালমান সরোয়ার চতুর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে বাংলার সমৃদ্ধিতে যোগ দেন। গতকাল বুধবার রাত ১০ টায় ছেলের সাথে সবশেষ কথা হয়। আমার সন্তানসহ আটকে পড়া সবাই যেন নিরাপদে দেশে ফিরে আসতে পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী, নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

ইউক্রেনে পণ্য নিয়ে আটকে যাওয়া বাংলাদেশি ‘বাংলার সম্বৃদ্ধি’ জাহাজে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলার এক বাসিন্দা রয়েছেন। তার নাম নাবিক মাসুম বিল্লাহ। ওবায়দুল হকের পরিবার থাকেন নগরীর কাটগড় এলাকায়।

নাবিক মাসুম বিল্লাহর বাবা মো. ওবায়দুল হক বলেন, জাহাজে হামলার পর থেকে খুব চিন্তায় সময় পার করছি। আমাদের সন্তানরা কেমন আছে, কি অবস্থায় আছে ঠিকমতো জানতে পারছি না। শিপিং করপোরেশনেসর কর্মকর্তারা আমাদের ধৈর্য্য ধারণ করতে বলছেন। কিন্তু আমি তো সন্তানের পিতা। ধৈর্য্য ধরার সামর্থ্য যে আমাদের নাই।

ইউক্রেনে আটকে পড়া ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে রকেট হামলার পর সেটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ২৮ বাংলাদেশি নাবিককে উদ্ধার কাজ শুরু করে পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস। তাদের টাগ বোটে করে জাহাজ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন বন্দরের কাছাকাছি কোথাও বাংকারে রাখা হবে। তারও আগে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মরদেহ বাংকারে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে। পরদিনই রাশিয়ার হামলা শুরু হয় ইউক্রেনে। তখন থেকেই জাহাজটি গত আট দিন ধরে আটকে আছে সেখানে। গত বুধবার হামলার পর অলভিয়া বন্দরে থাকা বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে আগুন ধরে যায়। শুরুতে নাবিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। অলভিয়া বন্দর থেকে একটি টাগবোট এসে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। নাবিকদের চেষ্টায় জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলায় জাহাজের ব্রিজ ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে নিথর দেহ পড়ে ছিলেন হাদিসুর রহমান আরিফ।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com