বিজ্ঞাপন দিন

প্রকাশিত হয়েছেঃ ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২২ সময়ঃ ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ

এস মনির চট্টগ্রাম ব্যুরো।।

চট্টগ্রামে করোনার কারণে নানাখাতে বিনিয়োগ কমলেও যেসব খাতে বেড়েছিল তার অর্ধেকই বিনিয়োগ হয়েছিল ফুড এলাইড খাতে। চলতি অর্থ বছরে চট্টগ্রামে আট খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ফুড এলাইড খাতে শুধু বিনিয়োগেই নয়, হাজার লোকের কর্মসংস্থান তৈরিতেও এ খাতটির রয়েছে অনবদ্য ভূমিকা।

গত অর্থবছর চট্টগ্রামে কৃষিভিত্তিক খাত, ফুড এলাইড শিল্প, প্রিন্টিং এণ্ড পাবলিশিং, ট্যানারি শিল্প, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, গ্লাস এণ্ড সিরামিক, ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর ও সার্ভিস ইণ্ডাস্ট্রিজ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। তবে ফুড এলাইড শিল্পে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয় যার পরিমাণ ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সে সাথে খাতটিতে বছরজুড়ে ১ হাজার ৬৮৫ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েেছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড (বিডা) সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রামে ফুড এলাইড খাতের পর ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর ও সার্ভিস ইণ্ডাস্ট্রিজ খাতে বিনিয়োগ হয় ৭৫৬ কোটি ৫৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, কৃষিভিত্তিক খাতে ১৩৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, ট্যানারি ও লেদার খাতে ৫০ কোটি ৫০ লাখ, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি খাতে ৪৪ কোটি ৯৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা, সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিজ খাতে ৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, গ্লাস ও সিরামিক খাতে ২৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ও টেক্সটাইল খাতে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ হয়।

তাছাড়া বছরজুড়ে ফুড এলাইড খাতে ১ হাজার ৬৮৫ জন, কৃষি খাতে ১ হাজার ৬১ জন, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি খাতে ৫৩৭ জন, টেক্সটাইল খাতে ৪২৮ জন, সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিজ খাতে ৩১৬ জন, প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং খাতে ৩০০ জন, ট্যানারি ও লেদার খাতে ১৬০ জন ও গ্লাস ও সিরামিক খাতে মাত্র ৬২ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়।

এদিকে গত অর্থবছরে বিডার সার্বিক চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আট খাতে ১২৪টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। নিবন্ধিত এ ১২৪টি প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৮ হাজার ৮৪১ জনের। এর আগের অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রস্তাব ছিল ৩ হাজার ২২৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা। নিবন্ধিত এ ৮৭টি প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছিল ১২ হাজার ৮৫৮ জনের। সে হিসেবে চট্টগ্রামে বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগের পাশাপাশি কমেছে কর্মসংস্থানও।

বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে আরও জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের জন্য মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের জন্য ১২টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৭৩৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তাছাড়া, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগকারী তিন প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪২৭ জনের। অপরদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগকারী ১২টি প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছিল ১ হাজার ৪১৮ জনের। পাশাপাশি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২টি বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৪১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছিল।

পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বছরের ব্যবধানে বিদেশি ও যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে চারগুণ। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের হারও কমেছে তিনগুণেরও বেশি।

অপরদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৯টি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৪টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের কাজের অনুমতি (ওয়ার্ক পারমিট) বাতিল করা হয়।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইণ্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম  বলেন, করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। আমাদের ব্যবসায়ীরাও চরম বিপাকে পড়েছিলেন। করোনা আর লকডাউনের কারণে বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। এখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। তাই আটা, ময়দা, সুজিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ছে। ফলে এ খাত উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুই জায়গায় অবদান রাখছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য সব সময় একই গতিতে থাকে না। এটা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়। তবে বর্তমান স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সঠিক পন্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের হার সামনে আরো বাড়বে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, গত অর্থবছরে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে করোনার প্রভাব তো ছিলোই। সেই সাথে লোকসানের ভয়, ব্যাংক লোনে স্থবিরতা নেমে আসায় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে সাহস করেননি। বর্তমানে দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয়মাসে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়েছে। আশা করছি এ বছর চট্টগ্রামে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের হার গত অর্থবছরকেও ছাড়িয়ে যাবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com