প্রকাশিত হয়েছেঃ ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২ সময়ঃ ৬:৫৬ অপরাহ্ণ
গাজীপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বিদেশ থেকে পাঠানো স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা লুটে নিতেই গাজীপুরে প্রবাসীর ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মা সাহেরা বেগমকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাÐের প্রায় দেড় বছর পর এ রহস্য উদঘাটন করলো পিবিআই। ঘটনায় জড়িত ২ আসামীকে গতকাল বৃহস্পতিবার ও গত বুধবার গ্রেফতার করা হয়। এরা হলো, গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার ভোগড়া পশ্চিম পাড়ার (মাটির মসজিদ) বাচ্চু মিয়ার ছেলে আল আমিন (২৬) ও স্থানীয় আদেপাশা উত্তর পাড়ার সফিজ উদ্দিনের ছেলে মামুনুর রশীদ (৩৮)। আসামী আল আমিন ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্ধী দিয়েছে এবং আসামী মামুনুর রশীদকে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তির বরাদ দিয়ে পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, বাসন থানার আদেপাশা উত্তর পাড়ার বাবুল সস্ত্রীক সৌদী আরবে চাকরি করেন। বাবুলের ৩ বছরের শিশুকন্যা সারা মনিকে নিয়ে তার বৃদ্ধা মা সাহেরা বেগম ঘটনাস্থলের বাড়িতে বসবাস করতেন। ভিকটিমের বাসায় ফরিদা বেগম নামে একজন কাজের বুয়া কাজ করতেন। গৃহপরিচারিকা ফরিদার ছেলে আল আমিন ওই বাসায় মাঝে মধ্যে যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে ভিকটিম সাহারা বেগম আল আমিনকে দিয়ে বিভিন্ন কাজকর্ম করাতেন। ঘটনার আগের দিন রাত সাড়ে ১০টায় আসামী মামুনুর রশীদ আসামী আল আমিনকে তার (মামুনের) বাড়ির সামনে ডেকে নেয় এবং বিদেশ থেকে ভিকটিমের ছেলের পাঠানো টাকা পয়সা, স্বর্নালংকার লুটে নেয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী আল আমিন ভিকটিমের বাসার সামনে পাহাড়া দেয়। আসামী মামুন ভিকটিমের বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে ভিকটিমকে বলে, ‘আপনার ছেলে বাবুল বিদেশ থেকে ফোন করেছে, গেইট খুলেন’। সাথে সাথে ভিকটিম বাসার গেইট খুলে দিলে আসামী মামুন ঘরের ভেতরে ঢুকেই ভিকটিমের গলায় গামছা পেচিঁয়ে নিচে ফেলে দেয়। এসময় ভিকটিম জ্ঞান হারিয়ে ফেললে আসামী মামুন ঘরের ভেতরের আলমারি হতে বিভিন্ন জিনিসপত্র লুটে নেয় এবং প্রধান ফটকে বাহির দিক থেকে তালা দিয়ে উভয় আসামী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আসামী মামুন এ কাজের জন্য আসামী আল আমিনকে ১০ হাজার টাকা দেয়। পর দিন দুপুর ১২টায় ভিকটিম তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন রিসিভ না করায়, ভিকটিমের ছেলে এবং ছেলের স্ত্রী প্রতিবেশী ছালমাকে ভিডিও কলের মাধ্যমে ভিকটিমের অবস্থা জানাতে বলে। তারা ভিকটিমের বাড়িতে গিয়ে ভিকটিমকে ডাকাডাকি করে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বাড়ির মেইন গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। পরে ভিকটিমের ছেলের অনুরোধে তারা মেইন গেটের তালা ভেঙ্গে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে শিশু সারা মনিকে কান্নারত অবস্থায় পায় এবং বাড়ির উত্তর-পশ্চিম কোনের রুমের ভেতরে ভিকটিমের মৃতদেহ গলায় গামছা পেঁচানো ও নাক মুখ দিয়ে হালকা রক্ত বের হওয়া অবস্থায় উদ্ধার করে। এ সংক্রান্তে নিহতের মেয়ে পারভীন আক্তার বাদী হয়ে বাসন থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং-৩৮) রুজু করেন। মামলাটি বাসন থানা পুলিশ প্রায় ১ বছর তদন্ত করে কোন কূলকিনারা না পেয়ে অবশেষে পিবিআই তদন্তের দায়িত্ব পায়। গত বছর ৯ জুন থেকে পিবিআই মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার এর তত্ত¡াবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগিতায় পুলিশ পরিদর্শক এস এম শাকিল হাসান মামলাটি তদন্ত করেন।