প্রকাশিত হয়েছেঃ জুন ৭, ২০২১ সময়ঃ ৬:০৪ অপরাহ্ণ
গাজীপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক:-
গেজেটভুক্ত বনভূমি বেহাতে জড়িত থেকেও বহাল তবিয়তে আছেন গাজীপুরের রাজাবাড়ী ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা এস এম আল-আমীন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রাজস্ব (ভূমি উন্নয়ন কর) তসরুফের একাধিক প্রমাণও মিলেছে। সরকারি স্বার্থ ক্ষুন্ন করাসহ দুর্নীতি, অনিয়ম ও অসদাচারণের একাধিক অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় গত ২১ মার্চ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন শ্রীপুর উজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ফারজানা নাসরীন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স্বপদে সদর্পে বহাল তবিয়তে আছেন এই কর্মকর্তা। লেখালেখি করলে তার আরো প্রমোশন হবে বলেও তিনি দম্ভোক্তি করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উর্দ্ধতন কতর্ৃপক্ষের নির্দেশে গত ৬ জানুয়ারি রাজাবাড়ী ভূমি অফিস পরিদর্শনে যান শ্রীপুর উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো মতিয়ার রহমান। এসময় তিনি ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা এস এম আল-আমীনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতি, অনিয়ম ও অসদাচরণের প্রমাণ পান। ব্যক্তি মালিকানা দাবীদার এমন কারোর অনুকূলে বনের গেজেটভুক্ত ভূমির নামজারি-জমাভাগ প্রস্তাব প্রেরণ ও ভূমি উন্নয়ন কর আদায় নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও স্থানীয় হালুকাইদ মৌজায় বনের জমির মালিকানা দাবীদার জনৈক আনছার আলীর কাছ থেকে এল ০২৭৬৭৭ নং আরআর (রাজস্ব রেজিস্ট্রার) মূলে ০.৪০ একর জমির ২৪৫৩ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করেন। যার খতিয়ান নং- ১০/১, জোত নং-৭, এসএ দাগ নং- ২০৯, আরএস দাগ নং- ৬৪ ও ৬৬।
এছাড়া জয়নারায়নপুর মৌজার ৮০/২৮ নং খতিয়ানের ২৮ নং পিও (পূর্বতন) জোত থেকে ১০৪/২০-২১ নং নামজারি ও জমাভাগের নথিমূলে এসএ ১০২ আরএস ১১৫ নং দাগে ০.৭৯ একর ভূমির অনুকূলে কমর উদ্দিন গং এর নামে একটি পৃথক খতিয়ান (যার জোত নং-৮২৪) সৃজন করেন। উক্ত খতিয়ানের পূর্বতন জোতে প্রায় ৫০ বছরের (বাংলা ১৩৭৯ সন থেকে ) ভূমি উন্নয়ন কর বকেয়া ছিল। সুদসমেত যার ভূমি উন্নয়ন কর দঁাড়ায় ১০ হাজার ১২৮ টাকা। অথচ তিনি গত বছর ১১ নভেম্বর ডব্লিউ ৫০৪৯৮৭ নং আরআর মূলে মাত্র ১০ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় দেখান। ভূমি অফিসের ২ নং রেজিস্ট্রারের ২৯ নম্বর পৃষ্ঠায় উক্ত ১০ টাকা জমা দেখানো হলেও অসৎ উদ্দেশ্যে সেখানে তারিখ উল্লেখ করেননি। এমনকি আরো অসংখ্য জোতে একইভাবে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় দেখিয়ে সরকারকে মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে এমন বেশ কয়েকটি জোত নম্বর উল্লেখও করা হয়েছে। যেমন একদিনেই (০৯-১১-২০২০ইং) রাজাবাড়ী মৌজার ১১৪ নম্বর জোতে ১২২ টাকা, ১৮৭ নম্বর জোতে ৪১ টাকা, ৪৫৯ নম্বর জোতে ৪১ টাকা, ৪৬৩ নম্বর জোতে ৪১ টাকা, ৪৬৮ নম্বর জোতে ৪১ টাকা, ৪৬৬ নম্বর জোতে ১৮৯ টাকা, ৪৬৭ নম্বর জোতে ৯৪ টাকা, ৪৬০ নম্বর জোতে ১২৭ টাকা ও ৩৬৫৫ নম্বর জোতের বিপরীতে ১৭৬ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় দেখানো হয়। এসব জোতের অনুকূলে মোটা অংকের রাজস্ব ফঁাকি দিয়ে যথাক্রমে ডব্লিউ ৫৫৪৯৭৭, ৫৫৪৯৭৮, ৫৫৪৯৭৯, ৫৫৪৯৮০, ৫৫৪৯৮১, ৫৫৪৯৮২, ৫৫৪৯৮৩, ৫৫৪৯৮৪ ও ৫৫৪৯৮৫ নং আরআর মূলে নামেমাত্র অর্থাৎ নির্ধারিত রেটের চেয়ে বহুগুণ কম রেটে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় দেখানো হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে মাত্র একদিনের এসব চিত্র তুলে ধরা হয়।
এছাড়া কানুনগো পরিদর্শনকালে ভূমি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাপ্রত্যাশীরা উক্ত ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আল-আমীনের বিরুদ্ধে চরম অসদাচরণের অভিযোগ করেন। এসব কারণে কানুনগো উক্ত ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩ এর (খ), (ঘ) ও (ই) মোতাবেক কারণ দর্শানো সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে তার দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্রীপুর উজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ফারজানা নাসরীন গত ২১ মার্চ গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবরে সুপারিশপত্র পেরণ করেন। যার স্মারক নম্বর ৩১.৪১.৩৩৮৬.০০০.২১.৯৭৭ (সং)। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে আজো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি গাজীপুর জেলা প্রশাসন।
এব্যাপারে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আল-আমীনের বিরুদ্ধে আরো তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।