বিজ্ঞাপন দিন

প্রকাশিত হয়েছেঃ ডিসেম্বর ২৭, ২০২১ সময়ঃ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ

আসাদুজ্জামান ফজলু, দিগন্তবার্তা ডেক্স, ২৭ ডিসেম্বরঃ
ময়মনসিংহের ভালুকার কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের এক কিলোমিটারের মধ্যে উপজেলার বাটাজোর বাজারে ৮/১০ টিসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা প্রায় শতাধিক অবৈধ করাতকলে অবাধে চেরাই হচ্ছে বিশাল বিশাল শাল-গজারি ও আকাশমনি গাছ। একটি সঙ্ঘবদ্ধ গাছ পাঁচারকারীদল রাতের আধাঁরে অব্যাহতভাবে সরকারি বনের গাছ কেটে নেয়াার ফলে উজাড় হচ্ছে কাদিগড় জাতীয় উদ্যান ও হবিরবাড়ি এলাকার ১১ গড় নামে গজারি বনসহ বিভিন্ন এলাকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল। বনবিভাগকে মিল প্রতি দুই হাজার টাকা মাসোহারা দিয়ে এসব করাতকল পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভালুকার কাচিনা ইউনিয়নের কাচিনা, বাটাজোর বাজার, মল্লিকবাড়ি, মাস্টারবাড়ি, কাশরগড়, মল্লিকবাড়ি মোড় ও মল্লিকবাড়ি বাজার, উথুরা রেঞ্জ অফিস সংলগ্ন, উথুরা বাজার, চামিয়াদী বাজার, কৈয়াদী বাজার, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড এলাকা, আঙ্গারগাড়া ও ডাকাতিয়া চৌরাস্তা বাজার, পনাশাইল বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা শতাধিক লাইসেন্সবিহীন করাতকলে দিনরাত চলে শাল-গজারি ও আকাশমনি কাঠ চেরাই। বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবাধে এসব গাছ কাটা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা গেছে, বৃক্ষসম্পদ সংরক্ষণ ও পর্যটন সুবিধা উন্নয়নের জন্য সরকার বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও সংশোধন) আইন ১৯৭৪-এর ২৩(৩) ধারার আওতায় ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর এক আদেশবলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের পালগাঁও এলাকায় ৮৫০ একর ভূমির সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে কাদিগড় জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। এখানে রয়েছে পুরনো শাল-গজারি গাছের অপরূপ সবুজের সমারোহ। জাতীয় উদ্যান হিসেবে ওই এলাকাটি চিহ্নিত হওয়ার পর তা সংরক্ষণে সরকারিভাবে কাজ শুরু হয়। কিন্তু জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে একটি চক্র উদ্যানের গাছ কাটা শুরু করে। চক্রটি রাতে উদ্যান এলাকা থেকে গজারি গাছ কেটে ঘোড়ার গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে পার্শ্ববর্তী বাটাজোর বাজার ও আশপাশের বিভিন্ন করাতকল মালিকদের কাছে পৌঁছে দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাদিগড় মৌজার ৩৮৩ নম্বর দাগে তালাব দক্ষিণপাড়া মরাপুড়া ব্রীজের উত্তর ও পশ্চিমে বেশ কয়েকটি চালা থেকে বিশাল বিশাল গজারী গাছ কেটে চুরি করে নিচ্ছে একটি চক্র। নাম প্রকাশ না করার সর্তে এলাকাবসি জানান, স্থানীয় খোকা ও লাহু নামে দুই ব্যক্তি এসব চালা থেকে গজারী গাছ কেটে নিয়ে বন উজাড় করছে এবং এসব ফাঁকা জমি দখল করে বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন ফসলাদির বাগান করছেন।
বনআইনে বন এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও কাদিগড় বনাঞ্চল থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে কাচিনা বাজার ও আড়াই কিলোমিটার দূরে বাটাজোর বাজার এলাকায় ২০টি লাইসেন্সবিহীন করাতকল গড়ে উঠেছে। এসব করাতকলে উদ্যানের বিভিন্ন প্রজাতির গাছের কাঠ চেরাই করা হয়। কাদিগড় বনবিট অফিস থেকে মাত্র এক-দেড় কিলোমিটার দূরে বাটাজোর বাজারে আতিক মন্ডল, পলাশ তালুকদার, সেলিম তালুকদার, ইমরুল তালুকাদার, জাহাঙ্গীর মেম্বার, নয়ন মিয়া ও পাপনের মালিকানাধীন অবৈধ করাতকল ছাড়াও আরো সাত-আটটি করাতকলে প্রকাশ্যেই চেরাই করা হচ্ছে বনের গাছ। শুধু কাচিনা আর বাটাজোরই নয়, জাতীয় উদ্যানের মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে তামাট বাজারে শাহীন মেম্বারের মালিকানাধীন করাতকলসহ তিনটি করাতকলে রাতদিন বনের গাছ চেরাই করা হয়। ক্রমাগত গাছ কাটার ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জাতীয় উদ্যানের সৌন্দর্য ও ধ্বংস হচ্ছে জাতীয় সম্পদ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছুদিন আগেও উদ্যান এলাকায় মেছোবাঘ, লজ্জাবতী বানরসহ কয়েক প্রজাতির প্রাণী উন্মুক্ত করা হলেও বন উজাড় হওয়ায় এদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছে অবৈধ করাতকল মলিক ও কাঠ পাচারকারী সংঘবদ্ধ চক্র।
এদিকে ভালুকা রেঞ্জের হবিরবাড়ি বিটের আওতায় মনোহরপুর গ্রামে তিনদিক গাজারী বাগান থাকার পরও বনকমিটির সাবেক সভাপতি আবুল কাশেমের ছেলে সোহাগ মিয়া অবৈধ করাতকল বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ১১ গড় নামে পরিচিত বিশাল বন এলাকাসহ আশপাশের বিশাল বিশাল গজারী গাছ রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে তার নিজস্ব করাতকলে চেড়াই করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক করাতকল মালিক জানান, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এমনকি প্রতি মাসে প্রতিটি করাতকল পরিচালনার জন্য দুই হাজার টাকা সেলামী দিয়ে লাইসেন্স ছাড়াই বছরের পর বছর উদ্যোনের গাছ কেটে চেরাই করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, এলাকার প্রত্যেকটি স’ মিল মালিকের নিজস্ব ফার্নিচারের দোকান রয়েছে। তাই এসব চোরাই কাঠ সহজেই আশপাশ এলাকায় বিক্রিসহ তাদের ফার্নিচারের দোকানে ব্যবহার করতে পারেন।
উপজেলার বাটাজোর বাজারে অবস্থিত অবৈধ দু’টি করাতকলের মালিক নয়ন মিয়া জানান, তারা প্রতি মাসে সব মিল থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা কালেকশন করে স্থানীয় বনবিট অফিসকে মাসোহারা দিয়েই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এ ব্যাপারে কাদিগড় বিট কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন করাতকল প্রতি মাসোহারা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে নয়া দিগন্তকে জানান, তিনি এই বিটে নতুন যোগদান করেছেন এবং প্রতিটি করাতকল মালিককে চিঠি দিয়েছেন।
হবিরবাড়ি রেঞ্জ কর্মকতার্ মহিউদ্দিন জানান, জাতীয় উদ্যানের আশপাশসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা করাতকল মালিকতের বিরুদ্ধে অচিরেই অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন বলেন, বনের গাছ কাটা রোধে এরই মধ্যে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। আবারো অভিযান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com