বিজ্ঞাপন দিন

প্রকাশিত হয়েছেঃ ডিসেম্বর ২০, ২০২১ সময়ঃ ৪:৩০ অপরাহ্ণ

আসাদুজ্জামান ফজলু, দিগন্তবার্তা ডেক্সঃ
ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ও বিস্তির্ণ ফসলি জমিতে গড়ে উঠা লাইসেন্সবিহিন ১০/১২ টি ইটভাটা নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করছেনা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়পত্র ছাড়াই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেদাড় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ফলে মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়েছে ফসলি জমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (যা ১ জুলাই/২০১৪ থেকে কার্যকর) এ বলা হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, বার্টিক্যাল শফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরুপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া আবাসিক, জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবেনা এবং সরকারী বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে দুই কিলোমিটার দুরত্বে করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর হতে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবেনা। আর এই আইন অমান্য করলে ১০ বছরের কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
আর এসব ইটভাটা তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় বনবিভাগ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও তাদের রহস্যজনক নিরবতার কারণে ভালুকার অধিকাংশ ইটভাটা মালিক এসব আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে দেদার তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আশপাশ এলাকার আবাদি জমির উর্বরতা হ্রাসসহ বিভিন্ন প্রজাতীয় ফলজ, বনজ গাছপালাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন উপজেলার ধরিয়া পলাশতলী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্ব ধলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরপাশ ঘেষে তিনটি ইটভাটা। আনিছুর রহমানের রিফাদ ব্রিক্সের পাশে গাড়ি ভর্তি ও স্তুপিকৃত এবং হুমায়ন কবির খানের আল সাফা ব্রিক্সেও একই অবস্থা। লাইসেন্স বিহিন তাদের এসব ইটভাটার চারপাশে মজুদ করে রাখা হয়েছে কয়েক’শ মন লাকড়ি। চিমনী দিয়ে প্রচন্ড বেগে বের হচ্ছে ধোয়া। আর সেই ধোয়া স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষাথর্ীসহ আশপাশের বসতি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে পুরুড়া গ্রামে অবস্থিত দুলু চৌধুরীর মিজার্ ব্রিক্সেও একই চিত্র চোখে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভালুকা উপজেলার খারুয়ালী, ধলিয়া, মেদীলা, মেদুয়ারী, ভান্ডাব, বিরুনীয়া, রাংচাপড়া, শান্তিগঞ্জ, চান্দরাটি, হবিরবাড়ি ও ভালুকা উপজেলার সীমান্তবর্তী উরাহাটি গ্রামে মনু মিয়া এমএমআরসহ দুুুটি ভাটা ও পাশের শ্রীপুর উপজেলার সীমান্তবতর্ী ধামলই গ্রামে সুরুজ মিয়ার টিএলআর ব্রিক্সসহ ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় ১০/১২ টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার দু’্একটি ছাড়া কোনটিরই হালনাগাদ লাইসেন্স নবায়ন বা পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ইটভাটায় শিশু ও নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়ে থাকে এমনকি ইট তৈরীতে ৩ থেকে ৪ ধরণের ডাইস ব্যবহার করা হয় এবং ইটের সাইজ ছোট-বড় করে প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করা হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইটভাটা মালিক জানান, ভালুকার কোন ভাটারই লাইসেন্স নেই। কিভাবে চলে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, জেলা প্রশাসক ও বনবিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টর ম্যানেজ করেই ভাটা পরিচালনা করা হয়ে থাকে। আর এসব ম্যানেজ করে থাকেন উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারী।
আল সাফা ব্রিক্সের মালিক ও ইটভাটা মালিক সমিতির সহ সভাপতি হুমায়ন কবির খান জানান, ভালুকায় ১০ টি ইটভাটা রয়েছে। দু’একটি ছাড়া কোনটারই লাইসেন্স নেই। সার্বিকদিক ম্যানেজ করেই বরাবর যেভাবে চালানো হয়ে থাকে, এ বছরও সেভাবেই ভাটাগুলো পারিচালিত হয়ে আসছে।

ভালুকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী নয়া দিগন্তকে জানান, ইতোমধ্যে একটি ভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা করা হয়েছে। কোন কোন ভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই বা ভাটা আইন অমান্য করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, খোঁজ নিয়ে অভিযানের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com