প্রকাশিত হয়েছেঃ ডিসেম্বর ৮, ২০২১ সময়ঃ ৯:০২ পূর্বাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার ,দিগন্তবার্তা ,৮ ডিসেম্বরঃ
আজ ৮ ডিসেম্বর, বুধবার ভালুকা পাক হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর মেজর আফসার বাহিনীর কাছে ১৯৭১’র এই দিনে ভালুকা ক্যাম্পের কয়েক হাজার রাজাকার আলবদর ও পাক সেনারা আত্মসমর্পন করে।
১৯৭১ সনের ৭ মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে বৃটিশ ভারত সেনাবাহিনীর (অবঃ) সুবেদার তৎকালীন ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি, আফসার উদ্দীন আহম্মেদ ৭১ এর ১৭ এপ্রিল ১ টি মাত্র রাইফেল ও ৮ জন সদস্য নিয়ে ভালুকার মল্লিকবাড়ী বাজারের মুক্তি বাহিনীর দল গঠন করেন। পরবর্তীতে ভালুকা থানা দখল করে প্রচুর গোলাবারুদ সংগ্রহ করেন। এর কয়েক দিনের মাথায় কাউরাইদ হতে খীরু নদী দিয়ে ভালুকা থানায় আসার পথে পনাশাইল নামক স্থানে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও গোলা-বারুদ সহ একটি নৌকা আটক করে মুক্তিযোদ্ধারা। আফসার উদ্দীনের ৮ সদস্যের দলটি পরবর্তীতে প্রায় সারে ৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিশাল বাহিনীতে রুপ নেয়। এফ জে ১১ নং সেক্টরের ময়মনসিংহ সদর দক্ষিন ও ঢাকা সদর উত্তর সাব সেক্টর অধিনায়ক মেজর আফসার ব্যাটেলিয়ন নামে পরিচিতি লাভ করে। আফসার বাহিনীর যুদ্ধকালীন আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রমজান আলী তরফদারের তত্বাবধানে ৫ জন ডাক্তার ১০ জন সহকারী চিকিৎসক ও ৪ জন নার্সের সমন্বয়ে একটি ভ্রাম্যমান হাসপাতাল পরিচালিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এটি কিছুদিন রেডক্রস সংস্থার সাহায্যে আফসার ব্যাটেলিয়ান হাসপাতাল নামে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।
৭১ এর ২৫ জুন শুক্রবার সকাল হতে ভালুকা গফরগাঁও সড়কের ভাওয়লিয়াবাজু নামক স্থানে শিমুলিয়া নদীর পাড়ে পাক বাহিনীর সাথে আফসার বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হন। শুক্রবার সারাদিন সারারাত তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনের মুখে অনেক পাকসেনা নিহত হয়। পরদিন শনিবার সকাল ১১ টার দিকে ঢাকা হতে আকাশ পথে আসা হানাদার বাহিনি হেলিকপ্টার থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান লক্ষ করে ভাড়ি মেশিনগানের সেলিং শুর করে। মুক্তিযোদ্ধারাও হেলিকপ্টার লক্ষ করে পাল্টা ব্রিটিশ এল এম জি’র সাহায্যে গোলা বর্ষন অব্যাহত রাখলে হেলিকপ্টার পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে শনিবার সন্ধ্যার দিকে যুদ্ধক্ষেত্রের ৪ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে ধলিয়া গ্রামে ধলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার থেকে পাকসেনা নামিয়ে দিলে মুক্তিযোদ্ধারা ডিফেন্স ছেড়ে চলে আসেন। এই যুদ্ধে আফছার বাহিনীর তরুন যোদ্ধা অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র মল্লিকবাড়ী গ্রামের আঃ মান্নান মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। মজিবর রহমান সহ আহত হয় আরও ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা নদীর পশ্চিম দিক হতে একটানা দুদিন সম্মুখ যুদ্ধ করায় শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। ঐতিহাসিক ওই যুদ্ধের খবর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল-ইন্ডিয়া রেডিও ও বিবিসি হতে ফলাও করে সম্প্রচার করা হয়। এই যুদ্ধের পরে ভালুকা থানা ও বাজার এলাকায় পাক বাহিনীর ক্যাম্পটি শক্তিশালী করা হয়। স্থানীয় মুসলিমলীগ নেতারা এখানে গড়ে তোলেন একটি বিশাল রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প। এসব রাজাকার আলবদররা ভালুকার বিভিন্ন গ্রামে দিনের পর দিন মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষন,বাড়ীঘরে অগ্নি সংযোগ ও লুটপাট চালায়। আফসার বাহিনী যুদ্ধকালীন বিভিন্ন সময়ে একাধিক বার ভালুকা পাক হানাদার ক্যাম্পে আক্রমন চালিয়েছে। এছারা আমলীতলাযুদ্ধ, বল্লা যুদ্ধ, ত্রিশাল,গফরগাঁও,ফুলবাড়ীয়া,শ্রীপুর, মল্লিকবাড়ী, মেদুয়ারী সহ বিভিন্ন স্থানে পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে আফসার বাহিনীর অসংখ্য যুদ্ধ হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের বিভিন্ন যুদ্ধে মেজর আফসার উদ্দীনের পুত্র নাজিম উদ্দীন সহ ৪৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। মুজিব শতবর্ষ ও সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর ভালুকা মুক্তদিবসে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন ও ৭ দিন ব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছে।