প্রকাশিত হয়েছেঃ নভেম্বর ২৭, ২০২১ সময়ঃ ৭:৫৩ অপরাহ্ণ
গাজীপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ২৭ নভেম্বরঃ
এক পাগলীর দেয়া আগুনে টঙ্গীতে একটি বস্তির পাঁচ শতাধিক ঝুপড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত শুক্রবার রাত ৩টায় রাজধানীর সন্নিকটে তুরাগ নদের উত্তরে এবং বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের পূর্বপাশে অবস্থিত ‘হাজী মাজার বস্তি’ নামে পরিচিত টঙ্গীর সবচেয়ে পুরনো বস্তিতিতে এ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। স্থানীয়দের মতে, টঙ্গীতে এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ভূতপূর্ব সময়ে কখনো সংঘটিত হয়নি। এ অগ্নিকাণ্ডে বস্তির সহস্রাধিক পরিবার তল্পি-তল্পাসহ সব হারিয়ে এক কাপড়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের উদ্যোগে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য শনিবার বস্তিতে লঙ্গরখানা চালু করেছেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন সরকার জানান, তারা আপাতত: আগামী সাত দিনের একটি টার্গেট নিয়ে এ লঙ্করখানা চালু করেছেন। শনিবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্থানীয় এমপি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল ক্ষতিগ্রস্ত্র বস্তিবাসীদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এর আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল, আগামী সিটি নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল ক্ষতিগ্রস্ত বস্তি পরিদর্শন করেন। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীর লঙ্করখানায় নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।
বস্তিবাসীদের উদ্ধৃতি দিয়ে জিএমপি টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম জানান, রহিমা নামে বস্তির এক পাগলী রাত ৩টায় আগুন পোহাচ্ছিল। আগুনের একটি কুণ্ড ছিটকে পাগলীর শরীরে এসে পড়লে সেটিকে সে দূরে নিক্ষেপ করে। পরে ওই আগুন প্রথমে একটি ঘরে লাগে। এর পর একে একে সব ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে পাগলীর আগুনে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। বস্তির ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় আগুন দ্রুতই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুনে গ্যাস সিলিন্ডারের রাবারের পাইপ গলে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও ঘরে ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে অন্যত্র ছিটকে পড়ে আগুন দ্রুতই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তদন্তের আগে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে মুখ খুলতে নারাজ টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, কেউ বলছেন পাগলীর চুলো থেকে, আবার কেউ বলছেন মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। তাই তদন্ত ছাড়া এব্যাপারে মন্তব্য করা যাচ্ছে না, বলেন ইকবাল হোসেন।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন সরকার জানান, আগুনের ভয়াবহতায় দমকল বাহিনীর কর্মীরাও ছিলেন অনেকটা অসহায়। দমকল বাহিনীর কর্মীদের কাছে পানির লম্বা পাইপ না থাকায় তারা বস্তির ভেতরে পানি পৌছাতে পারেননি। ফলে শর্ট পাইপ দিয়ে পানি ছিটিয়ে শুধু রাস্তার পাশের কিছু ঘর রক্ষা করতে পেরেছেন। এভাবে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা পানি ছিটানোর পর আগুন বস্তির ভেতরেই সীমাবদ্ধ থেকে দাহ্যকার্য সমাপ্তি ঘটায়। তবে এ অগ্নিকাণ্ডে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
শনিবার বিকেলে বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীরা এক কাপড়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন এবং সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় তারা নাম লেখাচ্ছেন। বস্তির রহিমা জানান, তিনি কঁাচা তরিতরকারি ফেরি করে বেচেন এবং তার ছেলে বলাকা বাসে হেলপারি করেন। আগুনে তাদের সব পুড়ে গেছে। শেষ রাতে আগুনের তাপে তাদের ঘুম ভাঙ্গে এবং কোন মতে এককাপড়ে বস্তি থেকে জীবন নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পেলেও তাদের হাড়ি-পাতিল, কাপড়-চোপড়সহ কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। বৃদ্ধা আমেলা জানান, তিনি ভিক্ষা করে বহু কষ্টে জীবন যাপন করেন। আগুনে তার আশ্রয়টুকুও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ঃ এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এসময় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ, গাজীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নাজমিন শামীম, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ কে এম মহিদুল ইসলাম, টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহ আলম, স্থানীয় ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন সরকার উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নাজমিন শামীম জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১৫শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ২৭২০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শুকনো খাবারের প্যাকেটে ছিল ১০ কেজি করে চাল, ২ কেজি চিড়া, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি লবণ, ১ লিটার সয়াবিন তৈল ও আধা কেজি লুডল্স।
#