বিজ্ঞাপন দিন

প্রকাশিত হয়েছেঃ নভেম্বর ১৮, ২০২১ সময়ঃ ৪:২১ অপরাহ্ণ

মোঃ জাকির হোসেন, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি।।
ময়মনসিংহে চরাঞ্চলে ব্যাপকহারে শীতের সবজি টমেটোর চাষবাদ চলছে। ময়মনসিংহ জেলার সবচেয়ে বেশি টমেটো চাষাবাদ হয়ে থাকে সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ বোররচর অঞ্চলে। জেলার সবজি ভান্ডার খ্যাত সদর উপজেলার পরাণগঞ্জ ও বোররচর এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শত শত একর জমিতে করা হয়েছে আগাম জাতের টমেটোর আবাদ। চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন টমেটো খেতে স্যার কীটনাশক নিড়ানি এবং নেটের জাল দিয়ে পরিচর্চা করে। অনেক আগাম টমেটো বাগানে ফুল আসতে শুরু করেছে। কোন কোন কৃষক বেশি লাভের আশায় টমেটো চাষের পাশাপাশি করেছেন মরিচ,ফুলকপি ও বাঁধাকপির আবাদ। দেশে এখন মৌসুমে ও অমৌসুমে প্রচুর পরিমাণে টমেটো চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) বেশ কিছু টমেটোর জাত উদ্ভাবন করেছে যেগুলো চাষীরা বেশি আবাদ করেছে।
তবে দেশেও বেশ কিছু আধুনিক উচ্চফলনশীল জাতের টমেটো উদ্ভাবন করা হয়েছে যেগুলো ভাল ফলন দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এ দেশে এখন পঞ্চাশের ওপরে টমেটোর জাত চাষ হচ্ছে। এর বেশির ভাগই হাইব্রিড। ভালো ফল দেয়ার জন্য দিন দিন বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। কোন জাত চাষ করে লাভ বেশি হবে সে বিষয়টা এখন নির্ভর করছে মৌসুম ও বাজার দরের ওপর। তবে ভরা মৌসুমের চেয়ে আগাম বা নাবিতে এবং গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষ করে বেশি লাভ করা সম্ভব । মৌসুম অনুযায়ী এ দেশে চাষযোগ্য টমেটোর আগাম জাতসমূহের বীজ বপন করা হয় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। আগাম জাতসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বারি টমেটো ৪, বারি টমেটো ৫, রোমা ভিএফ, রোমারিও, টিপু সুলতান, গ্রেট পেলে, ডেল্টা এফ ১, উন্নয়ন এফ ১, পুষারুবী, নিউ রূপালী এফ ১ ইত্যাদি।
টমেটো চাষের বিষয়ে কথা হয় বোররচর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নামের একজন চাষীর সাথে তিনি জানান, তিনি এবার ১ একর ২০ শতাংশ জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। তার মোটামুটি ভালো টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর টমেটো গাছের ব্যাপক মরক ছিল। তবে এবার টমেটো গাছের মড়ক তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ২০ থেকে ২৫ দিন পর তিনি বাজারে টমেটো বিক্রি করতে পারবেন। প্রাথমিক অবস্থায় বাজার ভালো থাকলে ক্যারেট প্রতি দুই হাজার থেকে দুই হাজার পাঁচশ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করতে পারবেন। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে টমেটো চাষ করছেন।
এছাড়াও কথা হয় টমেটো খেতে পরিচর্যা করতে ব্যস্ত থাকা বোররচর কাচারী বাজার এলাকার টমেটো চাষী মোঃ আরিফ হোসেন ও তার বড় ভাইয়ের সাথে তারা জানান, তারা এবার ১ একর ৪০ শতকের জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। তারা চার বছর যাবৎ টমেটো চাষ করছেন। তিনি জানান, গত বছর টমেটো গাছের মরক বেশি ছিল এবং বাজার দর ছিল কম। তবে এবার মাসখানেক পরে তিনি বাজারে টমেটো পুরোদমে বিক্রি করতে পারবেন। ১একর ৪০ শতক জমিতে টমেটো চাষ করতে শ্রমিক মুজুরি খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকার উপরে। এছাড়াও সার বীজ কীটনাশক বাবদ খরচ তো আছেই। সব মিলিয়ে তাদের গত বছরে লস হয়েছিল। এবার তাঁরা আশা করছেন বাজার ভালো থাকলে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবেন। এর কম বিক্রি করলে তাদের পোষাবে না বলেও তিনি জানান। তিনি জানান সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা আরো বেশি ভালো করতে পারবেন। তারা নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টমেটো চাষ করছেন। এছাড়াও স্থানীয় বোররচর কাচারি বাজারে বীজ ও কীটনাশক বিক্রেতা দোকানদারের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম পরামর্শ ও সহযোগিতা পেয়ে থাকেন।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর ১৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সারা বিশ্বেই সবজি ফসলের মধ্যে আলু ও মিষ্টি আলুর পরেই সবচে বেশি উৎপাদিত হয় টমেটো। কেননা টমেটো একটি অত্যন- পুষ্টিসমৃদ্ধ সবজি। কাঁচা ও পাকা উভয় টমেটোই দেহের জন্য উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী অংশে যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা হল – পানি ৯৩.১ গ্রাম, প্রোটিন ১.৯ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, খনিজ ০.৬ গ্রাম, আঁশ ০.৭ গ্রাম, শর্করা ৩.৬ গ্রাম, সোডিয়াম ৪৫.৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১১৪ মিলিগ্রাম, কপার ০.১৯ মিলিগ্রাম, সালফার ২৪ মিলিগ্রাম, ক্লোরিন ৩৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিনএ ৩২০ অন-র্জাতিক একক, থায়ামিন ০.০৭ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাবিন ০.০১ মিলিগ্রাম, নিকোটিনিক এসিড ০.৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি ৩১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, অক্সালিক এসিড ২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩৬ মিলিগ্রাম এবং লৌহ আছে ১.৮ মিলিগ্রাম। টমেটোর পুষ্টির পাশাপাশি ভেষজ মূল্যও আছে। এর শাঁস ও জুস হজমকারক এবং ক্ষুধাবর্ধক। টমেটো রক্ত শোধক হিসেবেও কাজ করে।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com