প্রকাশিত হয়েছেঃ মার্চ ৯, ২০২২ সময়ঃ ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ
ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে নির্মাণসামগ্রীর দাম। তবে লাগামহীনভাবে বাড়ছে রডের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে বিভিন্ন গ্রেডের রডে টনপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোহার দাম এখন আকাশচুম্বী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ভবন নির্মাণের প্রধান কাঁচামাল রডের দাম বাড়ায় চট্টগ্রামে সরকারের চলমান উন্নয়নকাজগুলো হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদাররা। সেই সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষও।
রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে— রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে স্ক্র্যাপ পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতিটন স্ক্র্যাপ পণ্যে ৮০ ডলার বেড়ে বর্তমানে ৬৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে আগে থেকেই বাড়তি জাহাজ ভাড়া তো আছেই। তাই রডের দাম এখন নাগালের বাইরে।
অপরদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে— বর্ষাকাল আসলেই নির্মাণকাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই এখন হচ্ছে কাজের উপযুক্ত সময়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু রড নয়, পাথর, সিমেন্ট, ইট, বিটুমিনসহ সবকিছুই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে চট্টগ্রামে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে। বর্তমানে ভালো আবহাওয়ায় সরকারের উন্নয়ন কাজগুলো ৯০ শতাংশ হারে চলার কথা থাকলেও নির্মাণসামগ্রীর বাড়তি দরে সে কাজের গতিধারা এখন নেমে ২৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার আব্দুল আজিজ বলেন ‘উৎপাদন পর্যায়ে দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবে খুচরা পর্যায়েও দাম বেড়ে যায়। প্রতিদিন আমাদেরকে একটাই প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে, রডের দাম এত বেশি কেন? কাঁচামালের দাম বাড়ায় কারখানাগুলো বাড়তি দরে রড বিক্রি করছে। এখানে তো আর আমাদের হাত নেই।’
একেখান এলাকার শাহ আলম ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী শাহ আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘রডের এমন বাড়তি দাম দেখে শুধু ক্রেতা নয়, আমরাও রীতিমত অবাক হয়েছি। কোম্পানির লোকজন বলেছে, যুদ্ধের প্রভাবে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। সে সঙ্গে রডের সরবরাহও তুলনামূলক কমে গেছে। তাই দাম বাড়তি।
চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন সেফুল বলেন, ‘বর্তমানে চট্টগ্রামে সরকারের প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। তবে কাজের গতি একদম কমে গেছে। এখন পুরোদমে আমাদের কাজ চলার কথা। যেহেতু বৃষ্টি নেই। যেখানে এখন ৯০ শতাংশ কাজ চলার কথা সেখানে এখন কাজের গতি নেমে প্রায় ২৫ শতাংশে এসেছে। টনপ্রতি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়া রড এখন ৮৫ থেকে ৮৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে কাজের গতিতে ভাটা পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘শুধু রডের দাম নয়, একাধারে সিমেন্ট, পাথর, বালু, বিটুমিন সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রতিটন পাথরে ১ হাজার ৮শ টাকা বেড়ে ৫ হাজার টাকা, প্রতি হাজার ইটে ৪ হাজার টাকা বেড়ে ৯ হাজার ও প্রতি ড্রাম বিটুমিনে সাড়ে তিন হাজার টাকা বেড়ে বর্তমানে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে করে আমাদের প্রায় তিন হাজারের বেশি ঠিকাদার বিপাকে সময় পার করছেন।
রড প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের ডিরেক্টর (করপোরেট) সামশুল হক বলেন, রডের দাম বাড়ার একটাই কারণ, তা হলো বিশ্ববাজারে রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের বাড়তি দাম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কবে এ শঙ্কা কাটবে তাও বলা যাচ্ছে না। আমরা পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও নানাভাবে প্রভাবিত হচ্ছি। বাড়তি দাম দিয়ে কাঁচামাল কিনে আবার বাড়তি জাহাজ ভাড়া গুণতে হচ্ছে। তাই রডের দাম বেড়েছে।
বাড়তি রডের দামে মুখ থুবড়ে পড়েছে চট্টগ্রামের আবাসন খাতও। আবাসন খাত সংশ্লিষ্টরা অনেকেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রেখেছেন। আবার কেউ খুব ধীর গতিতে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবদুল কৈয়্যুম চৌধুরী বলেন, বর্তমানে যা পরিস্থিতি চলছে আমরা তো নিঃশেষ হয়ে যেতে আর বেশিদিন সময় লাগবে না বোধ হয়। আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়েছি। অথচ এখন রডের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় আমাদের ব্যয়খরচও বেড়ে গেছে। কিন্তু আমরা তো ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিচ্ছি না। প্রতিটন রড ৭০ বা ৭১ হাজার টাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি হয়েছে। তা বেড়ে এখন ৮৪ থেকে ৮৫ হাজার টনে বিক্রি হচ্ছে। এটা মেনে নেয়া মুশকিল। তাই আমরা রিহ্যাবের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছি। আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিডিস্থতি কোনদিকে গড়ায় সেজন্য আমরা অপেক্ষা করছি।