প্রকাশিত হয়েছেঃ মার্চ ৫, ২০২২ সময়ঃ ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ

এম এস মনির চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরো।।

চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণ নিয়ে যখন দক্ষিণ কোরিয়া আলোচনা শুরু করেছিল তখনই নিজেদের খরচেই সম্ভাব্যতা যাচাইসহ পুরো মেট্রোরেল নির্মাণ করে দিতে প্রস্তাব দিয়ে বসে চীনের চারটি রাষ্ট্রয়াত্ব প্রতিষ্ঠান। বিনিময়ে তারা চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলের ৬০ একর জায়াগায় নিজস্ব স্মার্ট সিটি নির্মাণের সুযোগ চেয়েছিল। প্রস্তাবটি বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাতেও সম্মত সংসদীয় কমিটি। এমন সময়ে এবার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে চট্টগ্রাম নগরে মেট্রোরেল নির্মাণে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এরআগে তারা বাংলাদেশ সরকার ও দক্ষিণ কোরিয়ার অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রকল্পের সমীক্ষা যাচাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল।
গত  ২ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে চতুর্থ বাংলাদেশ-কোরিয়া যৌথ পিপিপি প্লাটফর্ম সভায় এ বিনিয়োগ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সভায় বাংলাদেশের পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সচিব সুলতানা আফরোজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিনুল্লাহ নূরী, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. কাউসার আমীর আলী, বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. নাজমুল আবেদীন, পিপিপির মহাপরিচালক মো. আবুল বাশার। সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের পক্ষে ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সিওন অন উনের নেতৃত্বে সেদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

চাহিদার ভিত্তিতে উভয় দেশের তরফ থেকে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয় সভায়। বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে প্রস্তাব চারটি প্রকল্পের মধ্যে ছিল চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের ভূমি, অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সিওন অন উন সভায় বলেছেন, পিপিপি বাংলাদেশ ও কোরিয়ার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদারত্বকে শক্তিশালী করেছে। ফলস্বরূপ দক্ষিণ কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে আরও সহযোগিতার জন্য যৌথ পিপিপি প্লাটফর্মের মাধ্যমে সড়ক, সেতু, রেলওয়ে এবং ট্রান্সমিশন লাইনের চারটি অবকাঠামোগত পিপিপি প্রকল্প নির্বাচন করা হয়েছে।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও সুলতানা আফরোজ বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণেও বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয়ের পুরো অংকটাই বিনিয়োগ করতে চায় কোরিয়া।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সমীক্ষা সম্পন্ন করতে ১৮ মাস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সমীক্ষা করতে ৭৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৫১ কোটি টাকা অনুদানে সমীক্ষা চালাতে চায় কোরিয়া। সমীক্ষার বাকি ২৬ কোটি টাকা দিতে হবে সরকারকে। আড়াই বছর আগে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চট্টগ্রামের মেট্রো রেল নির্মাণের প্রাক যোগ্যতা সমীক্ষা করা হয়।

তখন চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের তিনটি রুট (এমআরটি লাইন) করার কথা বলা হয়, যার দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ছিল কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১ (দৈর্ঘ্য সাড়ে ২৬ কিলোমিটার, স্টেশন ২০টি); সিটি গেট থেকে নিমতলা হয়ে শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর পর্যন্ত লাইন-২ (দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, স্টেশন ১২টি) এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গিবাজার ও পাঁচলাইশ থেকে এ কে খান পর্যন্ত লাইন-৩ (দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৪ কিলোমিটার, স্টেশন ১৫টি)। প্রতি কিলোমিটার মেট্রোরেল লাইন স্থাপনে সম্ভাব্য ব্যয়ের কথা বলা হয় এক হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।

যদিও বন্দরনগরে মেট্রোরেল নির্মাণে চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানেরও আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে এরই মধ্যে। চাইনিজ রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসি) চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের মেগা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব দেয় সরকারকে। এমনকি এটি তারা সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে করে দিতে আগ্রহ দেখায়। যদিও এই প্রস্তাবে তারা আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে। সেটি হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনালের পর থেকে শুরু করে মিরসরাই বঙ্গোপসাগর উপকূলে স্মার্ট সিটি বানাতে চায় তারা। মাঝখানে বাদ যাবে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা শিল্প এলাকা। সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের উন্নত শহরের আদলে এ স্মার্ট সিটিতে থাকবে হোটেল-মোটেলসহ উন্নত সুযোগ-সুবিধা। স্মার্ট সিটি প্রকল্প থেকে যা আয় হবে, তা চীনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ভাগাভাগি করে নেবে।

তবে চীনের এই আলাপ-আলোচনার মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন সংস্থা কোইকা এ প্রকল্পে তাদের আগ্রহের কথা জানায়। শেষ পর্যন্ত পিপিপি প্লাটফর্মের সভায় প্রকল্পটিতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিলো কোরীয় সরকার।

প্রাক যোগ্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, মেট্রোরেলের সর্বোচ্চ গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার এবং গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার। একটি ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটির মাধ্যমে ঘণ্টায় দুই প্রান্তের প্রায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব।

ওই প্রতিবেদনে এমআরটি লাইন-১-এ ২০টি স্টেশনের প্রস্তাব করা হয়। এগুলো হলো- কালুরঘাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, চান্দগাঁও সিএনবি বাস স্টপ, হাজেরা-তজু ডিগ্রি কলেজ, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলা, চকবাজার, জহুর আহমেদ চৌধুরী রোড, লালখানবাজার, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বারিক বিল্ডিং, নিমতলী, সল্টগোলা ক্রসিং, সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, স্টিল মিল বাস-স্টপ, পতেঙ্গা, পতেঙ্গা বিচ এবং এয়ারপোর্ট।

এমআরটি লাইন-২-এ ১২টি স্টেশনের প্রস্তাব করা হয়। এগুলো হলো- সিটি গেট, কর্নেল হাট গেট, একে খান বাস স্টপ, সরাইপাড়া, নয়াবাজার, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, পোর্ট নিউ মার্কেট, নিমতলী, বারিক বিল্ডিং, সদরঘাট, ফিরিঙ্গিবাজার এবং শহীদ বশিরউজ্জামান স্কয়ার।

এমআরটি লাইন-৩-এ ১৫টি স্টেশনের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো- অক্সিজেন, হাশেম বাজার রোড, মুরাদপুর, চকবাজার, চন্দনপুরা, আন্দরকিল্লা, কোতোয়ালী, ফিরিঙ্গিবাজার এবং পাঁচলাইশ-একে খান বাস স্টপ লিঙ্কে পাঁচলাইশ, মেডিকেল, জিইসি স্কয়ার, বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট, ফয়ে’স লেক, পাহাড়তলী লিঙ্ক রোড এবং একে খান স্টপ।

প্রকাশক ও সম্পাদক

আসাদুজ্জামান (ফজলু)

হাউজ নং: ২০, ফ্ল্যাট নং: বি২, রোড নং: ০৭

সেকশন: ১২, উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০

মোবাইল: ০১৭১৮-১৯২৬৮৫, ০১৭৬১-৫৮২৩৩৮

ইমেইল: contact@digontabarta.com